মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক গুলো এবং তার থেকে বাঁচার উপায়
বর্তমানে মোবাইল ফোন হয়ে উঠেছে আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী । ছোট বড় প্রায় সবার
হাতেই রয়েছে মোবাইল ফোন । কিন্তু আমরা কি এটা জানি যে মোবাইল ফোনের
অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর । মোবাইল ফোন ব্যবহারের
ক্ষতিকর দিকগুলো এবং তার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে সবার জানা উচিত ।
প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে প্রায় সবাই আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি । যতদূর সম্ভব
মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করুন । মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিক ও
মানসিকভাবে আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক গুলো এবং তার থেকে বাঁচার উপায়
ভূমিকা
মানুষ শুধু যোগাযোগের জন্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না । আজকাল মোবাইল ফোন
বিনোদনের ও অন্যতম মাধ্যম । কিন্তু মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের জন্য
বিপদ ডেকে এনেছে । মোবাইল ফোন নানাভাবে আমাদের ক্ষতি করছে । আমরা আপনাদেরকে সচেতন
করার জন্য আজকের এই পোস্টটিতে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক গুলো এবং তার
থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি । জানতে হলে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো
প্রায় প্রতিটি জিনিসেরই ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে । যেটা অনেকটা নির্ভর করে সেই
জিনিসটা আমরা কিভাবে ব্যবহার করছি তার উপর । মোবাইল ফোন ব্যবহার আমাদের জন্য যেমন
ভালো তেমনি এর বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে । মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে আমাদের
যেসব ক্ষতি হচ্ছে তা আলোচনা করা হলো :
চোখের ক্ষতি : মোবাইল ফোন থেকে নির্গত নীল আলো চোখের জন্য মারাত্মক
ক্ষতিকর । টানা দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্ষতি হতে পারে
। দীর্ঘদিন ধরে কেউ যদি এভাবে মোবাইল ব্যবহার করা তাহলে তার চোখের ক্ষতি হয়ে
যাবে ।
কানের সমস্যা : আমরা অনেকেই হয়তো এটা খেয়াল করেছেন যে দীর্ঘ সময় ধরে
মোবাইলে কথা বললে মোবাইল গরম হয়ে যায় সাথে সাথে আমাদের কানও গরম হয়ে যায় ।
অনেকদিন ধরে এভাবে চলতে থাকলে একসময় গিয়ে শ্রবণশক্তি কমে যাবে । অনেকেই আবার
কানে হেডফোন লাগিয়ে উচ্চস্বরে গান শোনেন যেটা কানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ।
ঘুমের সমস্যা : পরিমিত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী । কিন্তু
অনেকেই রাত জেগে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ব্যবহার করে । যার ফলে পর্যাপ্ত ঘুম হয়
না । দীর্ঘ সময় এভাবে চলতে থাকলে ঘুমের সমস্যা তৈরি হয়ে যায় । রাতে আর সহজে
ঘুম আসে না ।
টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা : প্রতিনিয়ত দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইলে কথা বললে
ব্রেন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । যদিও বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানে পুরোপুরি
প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু ইতালি এবং ফিনল্যান্ডের একদল চিকিৎসক গবেষণা করে দেখেছেন
যে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইলে কথা বলার ফলে ব্রেন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
ক্যান্সার সৃষ্টিকারী : মোবাইল ফোন থেকে নির্গত উচ্চমাত্রার রেডিও
ফ্রিকুয়েন্সির কারণে ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।
নেদারল্যান্ডস এর কিছু চিকিৎসক এবং জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান WHO
ধারণা করছে যে মোবাইলের এই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির কারণে ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে
পারে ।
অটিজম : নেদারল্যান্ডের একদল গবেষক গবেষণা করে দেখেছেন যে মোবাইলে যে
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয় তা অনেক শক্তিশালী । যা মানুষের জেনেটিক
বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে দিতে পারে । যার যার ফলে প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে
পারে ।
পড়াশোনায় অমনোযোগী : অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহার পড়াশোনার মনোযোগ
কমিয়ে দিতে পারে । যা আমরা আজকাল আমাদের আশেপাশে দেখতে পাচ্ছি । বাচ্চারা
পড়াশুনা থেকে মোবাইল নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে ।
আরও পড়ুন ঃ মোবাইল ফোনের গুরুত্ব, সুবিধা এবং ব্যবহার
মেজাজ খিটখিটে : আজকাল আমরা না বুঝেই ছোট বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে
দিচ্ছি । বাচ্চারা কার্টুন দেখায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে । যার ফলে বাচ্চারা
স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবর্তে একটু ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠছে । এই পরিবেশ
বাচ্চাদের মেজাজকে খিটখিটে বানিয়ে দিচ্ছে ।
মাথা ব্যথা : আপনারা হয়তো এটা অনেকেই খেয়াল করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে
মোবাইল ব্যবহার করলে মাথা ব্যাথা করছে । অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার এই
মাথা ব্যথার জন্য দায়ী ।
জীবাণু সংক্রমণ : আমরা খালি চোখে দেখতে পারিনা কিন্তু মাইক্রোস্কোপের
সাহায্যে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া দেখা
যায় । আমরা যেহেতু হাত দিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি তাই খুব সহজেই এসব
ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহ প্রবেশ করতে পারে ।
পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়া : এই বিষয়টি গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত নয়
কিন্তু লোক মুখে প্রচলিত যে মোবাইল ফোন প্যান্টের পকেটে রাখার কারণে রেডিয়েশনের
প্রভাবে পুরুষের শুক্রাণু সংখ্যা কমে যাচ্ছে । এতে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে ।
মোবাইল আসক্তি : বর্তমানে মোবাইল আসক্তি টা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে । বিশেষ
করে তরুণদের মধ্যে এই বিষয়টা মারাত্মকভাবে দেখা যাচ্ছে । এরা সব সময় মোবাইলে
গেম খেলা সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ব্যস্ত । গেম খেলতে না দেওয়ার
কারণে আমাদের দেশে আত্মহত্যা করার মতো ঘটনা ঘটেছে । অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি
মানসিক বিপর্যয় ঘটাচ্ছে ।
ব্যক্তিগত তথ্য চুরি : ইন্টারনেটে বিভিন্ন ফিশিং সাইট রয়েছে । যেগুলোতে
অনেকেই না বুঝে ক্লিক করছে । এতে হ্যাকারদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে মানুষের
ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য এবং ছবি হ্যাকারদের হাতে চলে যাচ্ছে । এতে অনেক
বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে ।
সময়ের অপচয় : আমাদের জীবনে প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান । অথচ অনেকেই
মূল্যবান সময় কে ঘন্টার পর ঘন্টা গেম খেলে ভিডিও দেখে ,বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া
ব্যবহার করে নষ্ট করছে ।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো হতে বাঁচার
বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই । যোগাযোগ করা ছাড়াও
আরো বিভিন্ন কাজে আমাদেরকে মোবাইল ব্যবহার করতে হয় । মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে
আমরা একটু সচেতন হলে মোবাইল ফোনের এইসব ক্ষতিকর প্রভাব হতে বাঁচতে পারি । নিচে
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো হতে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা
হলো ঃ
- মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর নীল আলো হতে বাঁচতে আমরা Blue cut চশমা ব্যবহার করতে পারি । রাতের বেলা Night Mode অন করে ব্যবহার করলে চোখে আলো কম লাগবে । এছাড়া ফোনের ডিসপ্লে সেটিং থেকে Eye Protection বা Eye Comfort Shield অন করে রাখলে চোখের ক্ষতি হবে না ।
- একটানা দীর্ঘ সময় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কথা বলার সময় হেডফোন ব্যবহার করলে কানের ক্ষতি কম হবে ।
- রাতে ঘুমানোর পূর্বে বিছানায় গিয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা বাদ দিন । মোবাইল ফোন বিছানা থেকে দূরে রাখুন ।
- বাচ্চাদের থেকে মোবাইল ফোন দুরে রাখুন । বাচ্চাদের হাতে মোবাইল দিবেন না । বাচ্চাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন । এতে আপনার বাচ্চা মেধাবী হবে ।
- মোবাইল ফোনের ব্রাইটনেস কমিয়ে ব্যবহার করুন । ব্রাইটনেসের অটোমেটিক অপশনটা চালু রাখুন । তাহলে ভারসাম্য অনুযায়ী আপনার ফোনের ডিসপ্লে তে আলো থাকবে । তাহলে চোখের কোন ক্ষতি হবে না ।
- অনেকেরই বালিশের নিচে মোবাইল রেখে ঘুমানোর অভ্যাস আছে । এই কাজটি মোটেও করবেন না । ফোন থেকে নির্গত উচ্চ মাত্রার রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আপনার ব্রেইন এর ক্ষতি করবে ।
- মোবাইল ফোনের চার্জ লো হয়ে গেলে তখন কথা বলবেন না । কারন ব্যাটারি লো হয়ে গেলে ক্ষতিকর রেডিয়েশন বেশি ছড়ায় ।
উপসংহার
আশা করি আপনারা মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যে ক্ষতিগুলো হয়ে থাকে সে
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । তাই নিজে সাবধান হন এবং অন্যকে সচেতন করতে আমাদের এই
পোস্টটি বেশি বেশি শেয়ার করুন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url